শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

আপডেট
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক-যৌথবাহিনীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫ নিহত ১

আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক-যৌথবাহিনীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫ নিহত ১

জাহাঙ্গীর আলম রাজু: আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভের জেরে শ্রমিক ও যৌথবাহিনীর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক মারা গেছেন ৪জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এছাড়া বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমসহ যৌথ বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও আহত হয়েছেন। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ১১টা ৩০ মিনিটের সময় টঙ্গী-আশুলিয়া- ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকার মন্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া দুপুর ২টার সময় তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মো: ইউসুফ আলী। নিহত শ্রমিকের নাম কাউসার হোসাইন খান (২৭)। তিনি আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ম্যাঙ্গো টেক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিক। প্রাথমিকভাবে আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন-ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান। আহত অন্যান্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। গুলিবিদ্ধ দুজন শ্রমিককে পিএমকে হাসপাতাল ও দুজন-কে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শ্রমিকরা জানায়,সকালে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালিকপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্রিপক্ষীয় মিটিং চলছিল। এ সময় সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেন। পরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করেন। শ্রমিকরা র‍্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গুলি চালায়। এ সময় ৫ জন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হলে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতাল ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় এনাম মেডিকেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্রমিক কাউসার হোসাইন খানকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

উক্ত বিষয়ে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ৩জন-কে আনা হয়। এদের মধ্যে কাউসার মারা গেছেন। বাকি দুজনের চিকিৎসা চলছে। ন্যাচারাল ডেনিমসের এক শ্রমিক বলেন,সকালে আমাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিল। আমাদের কারখানায় কোনো ধরনের আন্দোলন হয়নি। তবে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়ে মন্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে যায়। সেখানে আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যোগ দেয়। এ সময় শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে গুলি ছুড়লে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আমি তাদের মধ্যে দুজন-কে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এছাড়া প্রায় ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পিএমকে হাসপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে ৪ জন শ্রমিক-কে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের পায়ে গুলি লেগেছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।

এছাড়াও ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার এইচআর অ্যাডমিন সবুজ হাওলাদার বলেন,আমাদের কারখানায় কোনো সমস্যা ছিল না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে পাশের মন্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিক মারা গেছে। এটা শুনেই সব শ্রমিক একসঙ্গে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে চলে যায়। পরে ওখানে কী ঘটেছে আমার জানা নেই। উক্ত বিষয়ে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |